Jump to content

User:Nazmus Sahadat

From Wikipedia, the free encyclopedia



                                         জন্ম                                                                                                                                     ইং- ২২শে জুলাই , Wednesday, ১৯৯৮ সাল (বাংলা - ৫ই শ্রাবণ বুধবার, ১৪০৫ বঙ্গাব্দে), হিজরী ২৭শে রবিউল আওয়াল ১৪১৯ বুধবার। বসিরহাটের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার প্রসন্নকাটি গ্রামে নানার বাড়িতে এই দুনিয়াতে শুভাগমন করি, পিতা - মোহাঃ আবু তালেব দফাদার , দাদু মৃত গোলাম মোস্তফা দফাদার , এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করি। দুনিয়ার নাজ , নেয়ামত , মায়া মমতা, দূঃখ কষ্ট , পৃথিবীর অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আল্লাহ আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ সেটাই করছি কিন্তু মূল বিষয় হলো যিনি রব্ব আমাকে পাঠিয়েছেন তার কাজ সম্পূর্ণ ভাবে করতে পারছি না।শৈশবকাল - আমার শৈশবের দিন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার শৈশবের দিনগুলো বা সময় কেটেছে সম্পূর্ণ প্রায়ই নানার বাড়ি। সেখানে তাদের আদর, যত্নে , সোহাগ, ভালোবাসা, স্নেহ, মমতায় বেড়ে উঠেছি। তার ঠিক দুই বছর পর অর্থাৎ ইংরেজি ২০০০ সাল ঐতিহাসিক বন্যার বছর, সেই সময় ১ মাসের মতো নানার বাড়ি থেকে এসেছি পরিবারের মুখে শোনা কথা । তবে আমার একটু একটু মনে আছে যে বন্যার দিনগুলো আমি অনেক কেঁদেছি এবং আমি এটাও বলেছি যে আমার নানার বাড়ি রেখে এসো ভয়ে। 
          আল্লাহওয়ালাদের সংস্পর্শ -   এখানে আমার আরো একটা সুন্দর স্মৃতি আছে যেটা আমি এতদিন লুকিয়ে রেখেছি তবে এই খাতিরে আমি প্রাকাশ করতে বাধ্য হচ্ছি আমার শৈশবের যখন ৩ বছর তখন আমি আল্লাহর রহমতে নানার পরিবারের সাথে ফুরফুরা শরীফ (বালেয়া বাসন্তী) গিয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। তখন বঙ্গীয় কুল শীরমনি আলা হজরত আল্লামা পীর মেজলা হুজুর পীর কেবলা (রহঃ) হায়াতে ছিলেন এবং তানার হাতে হাত দিয়ে মোছাফাহা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো করেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ।এখানে আর একজনের কথা না বললে নয় তিনি হলেন আমার প্রতিবেশী দাদু শাহ সূফী আলহাজ্ব কারামত আলি সাহেব (রহঃ) তিনি আমার অত্যান্ত স্নেহ করতেন এবং তার দেওয়া কিছু উপদেশ আমার জীবনে পালন করেছি এবং করছি আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে আমার শৈশব কাল অতিবাহিত হয় আলহামদুলিল্লাহ (পরিবার সূত্রে জানা) 




                                    কৈশর কাল ও শিক্ষাজীবন
                     সেই সময় পরিবারের কষ্ট হলেও কৈশরকাল অত্যান্ত আনন্দে কেটেছে । এত আনন্দে কেটেছে যে বলা বাহুল্য। একদিকে সু- সন্তান তৈরি করার জন্য মায়ের শাসন পিতার আদর নিজের খেলাধুলা আনন্দ উল্লাস সব আনন্দের সহিত মিলে মিশে কেটেছে আলহামদুলিল্লাহ। একদিকে ছিলো যেমন পিতা মাতার আদর ও শাসন ঠিক তেমনি নানার বাড়ির ভালোবাসা, আদর, যত্ন , সোহাগ। তবে আনন্দের বিষয় হলো হাজারো কষ্ট থাকার সত্ত্বেও আমাকে বুঝতে দেয়নি কষ্ট কি জিনিষ। আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে বেড়ে ওঠে কৌশর জীবন। তবে একটা দূঃখের বিষয় হলো এখানে দাদু বেঁচে না থাকায় দাদুর আদর যত্ন পাইনি । দাদু মৃত গোলাম মোস্তফা আমার জন্মের ২ বছর আগে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। ইন্না.............। দাদুর দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি কিন্তু দাদুর বয়সের কিছু লোকদের দেখে দাদুর স্নেহ,মায়া, মমতা উপভোগ করেছি। 
                         কৈশরের পড়াশোনার জন্য মায়ের শাসন বেশি পেয়েছি । আব্বা চাষি হওয়াই তেমন আমার পিছনে সময় দিতে পারেনি বেশি তবে তার ভালোবাসা পেয়েছি। আর এটাই স্বাভাবিক যে সন্তান মানুষ করার জন্য মায়ের ভুমিকা অপরিসীম। মায়ের শাসন এতোটাই কড়া ছিলো যে জীবনে খেলা করার সৌভাগ্য হয়নি । এখনো খেলা জিনিস টা একটা অ ধৈর্য্যের কাজ আমার পছন্দ হয় না। তবে আমার বয়স যখন ১৩ থেকে ১৪ বছর তখন পাড়ার সম বয়সী বাবু, চাচুদের সাথে গাদন খেলা, হা ডু ডু , ডিমের কুসুম ইত্যাদি খেলা করেছি মাত্র কিছুদিনের জন্য। এবং সব চাইতে বড়ো কথা হলো তারা যতদিন আমার ক্লাসমেট ছিলো ততদিন। ক্লাসমেট শেষ হয়ে গেলো তখন আর খেলা হয়নি।



শৈশবকাল ও কৈশোর কাল মিলিয়ে ৬ বছর অতিবাহিত করার প্রাথমিক শিক্ষার জন্য গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দেন । সেখানে ভর্তি হওয়ার পর কিছু দিন পরে স্কুলের মিড ডে মিল চালু হয় । সেই খুশিতে একসঙ্গে শৈশবের বন্ধু বান্ধব মিলে আনন্দে একসাথে পড়াশুনা করতে লাগলাম। বেন আনন্দে পড়াশোনা করার ৪ টি বছর অতিবাহিত করে ফেললাম বিনা ভাবনায় । তারপর ক্লাস ফোর পাশ করার পর গ্রামের আরো একটি জুনিয়ার মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম (গাছা আজিজিয়া জুনিয়ার হাই মাদ্রাসা MSK) কারণ মা বাবার ইচ্ছা ছিলো আমার সন্তান মাদ্রাসাতে পড়বে। তাদের সৎ ইচ্ছা পূরণের জন্য সেখানে পড়তে লাগলাম এবং খুব অল্প সময়ের ভিতর সকলে শিক্ষকদের কাছে ভালোবাসার পাত্র হয়ে উঠলাম। আলহামদুলিল্লাহ। সকলের ভালোবাসা পেয়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহে আগ্রহী হয়ে উঠলাম । মাদ্রাসার হেড শিক্ষক সহ বেশ আরো তিন শিক্ষকের কাছে আমি ছিলাম সবথেকে ভালোবাসার পাত্র। তাদের ভালোবাসা ছিলো আমার জন্য স্বর্গের মতো। এর ভিতরে যখন আমি ক্লাস সেভেন ও এইট এর পড়াশোনা করি তখন থেকেই আমি অনেক ম্যাচিউট হয়ে উঠলাম সেই সময় আমি একটা কিপেট মোবাইল ও কিনেছিলাম।

          সবথেকে আনন্দের বিষয় হলো আমি কৌশরের পড়াশোনার পর তথা ক্লাস এইট পাশ করে সাইকেল কিনে সেই বছর সাইকেল চালাতে শিখলাম। অনেক আনন্দ নিয়ে সেই বছরে কাটিয়াহাট সিনিয়ার মাদ্রাসাতে ভর্তি হলাম (কাটিয়া শাহ রজব আলি সিনিয়ার মাদ্রাসা) । আমার সাথে ভর্তির দিন গিয়েছিলেন আমার ছোট দাদু । ভর্তি হয়ে সেখানে বোকার মতো পড়াশোনা করতে লাগলাম সঙ্গীহীন ছাড়া। যেহেতু এক জাইগা থেকে অন্য জাইগা পরিবর্তন হয়েছে তাই । একা একা ক্লাস করতাম কারো সাথে কথা বলতাম না। একটা করে ক্লাস হয়ে গেলে বাইরে এসে একা একা মাদ্রাসার দক্ষিণ দিকে রাস্তার ধারে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতাম আর মানুষের যাওয়া আসা দেখতাম মাঝে মাঝে কেঁদেও ফেলেছি। মাদ্রাসার টিফিন হলে সকলে বাইরে যেত আর আমি একা বসে থাকতাম ক্লাসে কারো সাথে কথা না বলে । এভাবে কয়েকটা মাস কেটে গেল আস্তে আস্তে নিজেকে সামলাতে লাগলাম এবং বন্ধু ও হয়ে গেল তারপর নিজেকে আর সঙ্গীহিন মনে হতো না ।
                            এভাবে একটা বছর কেটে গেল এবং কয়েকটা বিষয় ফেল ও করেছিলাম। কিন্তু মনে সাহস নিয়ে বড়ো হওয়ার স্বপ্ন দেখে ক্লাস নাইন থেকে যখন ক্লাস টেনে উঠি তখন আমি আরো একটু ভালো করে পড়াশোনা করতে শুরু করলাম আলহামদুলিল্লাহ তার ফলও পেলাম তারপরেও দুটি বিষয় ফেল করেছিলাম। এই দেখে আমি ভাবলাম আলিম (ক্লাস ১০) এর পরিক্ষা তো আর মাত্র ৬ ই মাস বাকি আছে এই ভেবে আমি বন্ধুদের যোগাযোগে একটা কোচিং নিলাম সেটা আমার পক্ষে ছিলো খুবই কষ্টকর তবুও নিজেকে সামনে রেখে কষ্টকে উপেক্ষা করে সেখানে কোচিং করতে শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ সেখানে পড়াশোনা করতে শুরু করলাম আলহামদুলিল্লাহ। তারপর মাধ্যমিক পরিক্ষার টেস্ট এসেগেল পরিক্ষাটাও দিলাম তার পরেও একটা বিষয় ৪ নাম্বারের জন্য ফেল করলাম । সেই রেজাল্ট দেখে হেডস্যার আমাকে বললো নাজমুস সাহাদাত তুমি কি এই বিষয়ে কিছু বলবে আমি বললাম স্যার আপনি আমার উপর বিশ্বাস রেখে আমাকে মাধ্যমিক বোর্ডে নাম পাঠিয়ে দিন বাকিটা আমি দেখছি । তারপর আমি সেই কথা মতো কোচিং করতে শুরু করলাম এবং মাধ্যমিক পরিক্ষা এসে গিয়েছে তার প্রস্তুতি নিয়ে বোর্ডের পরিক্ষায় বসলাম আল্লাহর নাম নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ সব পরিক্ষা হতে মাত্র দুটি পরিক্ষা বাকি ছিলো কিন্তু অংক ও ভূগোল পরীক্ষার দিন আমার খুব জ্বর এক কথায় প্রচন্ড শারীরিক অসুস্থ সকলে আমার বাড়ি বোঝাতে লাগলো তুমি চিন্তা করো না আল্লাহ যেটা করবে সেটাই হবে। আলহামদুলিল্লাহ তাদের দুয়া ও আশির্বাদ নিয়ে প্রস্তুতি বিহীন পরিক্ষা দিতে গেলাম । সময়মতো পরিক্ষার হলে প্রবেশ ও করলাম আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর কাছে শতকোটি শুকরিয়া সেই দিনের পরিক্ষা দুটি খুব ভালো হয়েছিলো। তবে দূঃখের বিষয় হলো রেজাল্ট বার হওয়ার পর দেখলাম ৪০ নাম্বারের জন্য ফার্স্ট ডিভিশন হয়নি (সালটি ছিল ২০১৫)। তবে প্রতেকটি বিষয় ভালো নাম্বার উঠেছিলো। সেই ফার্স্ট ডিভিশন নাম্বার না পাওয়ার বেদনায় উচ্চ মাধ্যমিক (ফাজ্বিল) এ পুশিয়ে নিয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ।



                                      যৌবনকাল    
                     কৌশরকাল অতিবাহিত করার সাথে সাথেই যৌবন শুরু। এই যৌবনের ছেলে মেয়েরা কি না করে কিন্তু আমার মনে অনেক কিছু হলেও নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতাম এবং নফস কে এটাই বুঝ দিতাম তুমি তো অসহায় তোমার আর কি এসব করার সময় তুমি পড়াশোনার দিকে আগিয়ে যাও এবং পিতা মাতার মুখ উজ্জ্বল করো । এইভাবে সান্তনা দিতাম নিজেকে। এভাবে আলিম দেওয়ার সাথে সাথেই ছুটে গেলাম কাটিয়া হাট থেকে আরো ৪-৯ কিলোমিটার দূরে বসিরহাট আমিনিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসাতে কিন্তু সেখানের পঠন পাঠন দেখে ভালো না লাগাই আবার ২ মাস পরে স্বরুপ নগর ওসিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসাতে। সেখানে এসে আবার পুনরায় ক্লাস ১১ এ ভর্তি হলাম। ভর্তি হওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ ক্লাস করতে ও কোচিং করতে শুরু করলাম । কিছুদিন পরে মাদ্রাসা থেকে আমাদেরকে ওয়েলকাম স্বরূপ নবীন বরণ উৎসব হয়। তারা সকলে আদরের সাদরে বরণ করে নেয় আমাদেরকে। এভাবে দুটি বছর সেখানে ভালোভাবে কেটে যায় সকলের সঙ্গে মিলেমিশে পড়াশোনা শেষ করি। এবং ভালো রেজাল্ট করে উত্তীর্ণ হয়ে সেখান থেকে আবার বিদায় সংবর্ধনা জানিয়ে আমাদেরকে নবাগত ছাত্র ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদেরকে বিদায় দেয়। অশ্রু সিক্ত নয়নে চোখের পানি মুছতে মুছতে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট এবং সার্টিফিকেট নিয়ে বিদায় নিলাম (২০১৭) এবং উচ্চ ডিগ্রি লাভের উদ্দেশ্যে আলিয়া ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নেওয়ার জন্য এডমিশন পরীক্ষাও দিলাম। তবে সেদিন আমার ভিতরে একটা আশার আলো দেখতে পায় কিন্তু থেমে যায় এডমিশন টেস্ট দেওয়ার সময় ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড় আর 25 27 বছর বয়সের ছেলে-মেয়েদের দেখে আমি অনেক ঘাবড়ে যায়। আমার বিশ্বাস ছিল না যে আমি আলিয়াতে পড়াশোনা করতে পারব এদিকে পরিবারের দারিদ্রতা আর্থিক দুর্বলতা নিয়ে সবকিছু সামনে রেখে নিজের জীবনকে বাজি রেখে পরীক্ষা দিয়ে আসলাম। আলহামদুলিল্লাহ তার রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ায় দেখতে পেলাম একশত স্বজনের মধ্যে আমার র‍্যাঙ্ক হয়েছিল একটি বিষয়ে ৬৭ ওই একটি বিষয়ে ৬৫ সেই আশা নিয়ে আমি নিজের সাবজেক্টে চুস করলাম আলহামদুলিল্লাহ সেখানেও চান্স পেয়ে গেলাম আলিয়াতে ভর্তি হওয়ার। কিছুদিন পরে ভর্তি ডেট জানিয়ে দেয় আলিয়া কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটে সেখানে ভর্তি হয়ে গেলাম। ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন হয়ে গেল সেই দিনটি ছিল প্রথম আলিয়ায় পদার্পণের। যেটা ছিল নিউটাউন ক্যাম্পাস


                                 উচ্চ ডিগ্রী লাভের জন্য আলিয়াতে পদার্পণ 

আলিয়াতে যখন ভর্তি হয় তখন সালটি ছিল ২০১৭২০১৭ সাল থেকে শুরু হল ভার্সিটির জীবন। ভর্তির বেশ ১০-১৫ দিনের পর শুরু হল নতুন ক্লাস। অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম কিন্তু এতটাই জ্ঞান হয়ে ওঠেনি যে অনার্স কি? তারপরে বিষয়টা আস্তে আস্তে বুঝলাম আর অনার্স ছিল আমার ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে। প্রথম যেদিন ক্লাস করার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বার হয় মনে ভীষণ ভয় লাগছিল না জানি কি হয় কত দূরে যেতে হবে সেটা আবার কোথায়? এই প্রশ্ন মনের ভিতর বারবার জাগিয়ে তুলছিল। কিন্তু মনে বড় সাহস নিয়ে বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে বসিরহাট স্টেশনে পৌঁছায় সেখান থেকে বন্ধুদের সঙ্গে একসাথে হয় এবং তাদের সাথে সাহস করে ট্রেনে উঠি। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো কাটিয়াহাট ভর্তি হয়েছিলাম যখন তখন আমার একজন কেউ অভিভাবক ছিল। কিন্তু আলিয়ায় ভর্তি হওয়ার জন্য অভিভাবকহীন একা একা সবকিছু করলাম ভয়ে ভয়ে। আলহামদুলিল্লাহ সফল হলাম সব কাজেই। আলিয়া কে প্রথম যেদিন ক্লাস করি সেদিন আমাদের অভিভাবক বলতে বা ক্লাসের পঠন পাঠনের দায়িত্ব ছিল একজনকে। তাও তিনি একজন শিক্ষিকা। আস্তে আস্তে ক্লাস শুরু করলাম আলহামদুলিল্লাহ বন্ধুদের সঙ্গে বেশ ভালো লাগতো কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমার সবচাইতে কষ্টের দিন ছিল এবং আনন্দের দিন ছিল আলিয়ায় পড়াশোনা করা। বাড়ি থেকে দশ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে যাওয়া সেই সকালে সূর্য উদিত হওয়ার মোক্ষম সময় বেশ একটা আনন্দ ছিল। কষ্ট থাকলেও আলিয়াতে গিয়ে পৌঁছানোর পর মনের ভিতরে ভীষণ একটা আনন্দ উপভোগ করতাম সেই আনন্দের কথা বলে বোঝানো যাবে না। মাঝে মাঝে এই যাতায়াতের কষ্ট এতটাই বিপন্ন করে তুলতে আমাকে যে আমি মাঝে মাঝে আলিয়া থেকে ফেরার সময় কেঁদেও ফেলতাম। সকালে খেয়ে বার হওয়া বাড়ি থেকে খাদ্য তৈরি করে নিয়ে যাওয়া দুপুরের আহার সাদরে গ্রহণ করতাম। আবার কোনদিনও খাবার না নিয়েও যেতাম সেদিন কষ্টের পরিমাণটা আরো বেশি হত। বাইরের বাইরের খাবার খাওয়ার অভ্যাস ছিল না তাই বাইরে থেকে কিছু কিনতাম না। তবে আলিয়ায় যাওয়ার আনন্দটা বেশ মনে পড়ে এখনো সেই কষ্ট আর আনন্দ কি যে একটা সময় ছিল। সেটা বলে বোঝানো যাবে না কখনো কখনো আলিয়ার ১১ তলা ছাদে উঠে পুরো শহর টা দেখতাম.আর মনের হতে আনন্দ হতো। কয়েকবার আলিয়া থেকে দেখার জন্য কিছু দর্শনীয় জায়গা গুলো ভ্রমণ করেছি এবং আনন্দ উপভোগ করেছি আলহামদুলিল্লাহ। এই কষ্টের মধ্য দিয়ে কেটে যায় কয়েকটা সেমিস্টার তারপরে আমাদের ডিপার্টমেন্টের একজন স্যার এবং অভিভাবককে পেলাম আরো বেশি আনন্দ হতো। এভাবে কেটে যায় B.A Hons এর তিনটে বছর তারপর লকডাউন পড়ে যায় করোনা ভাইরাসের কারণে। এরাই দুটো বছর এভাবে কেটে যায় বাড়ি বসে। ভালো লাগছিল না সেই আলীয়ার কথা বারবার মনে পড়ছিল কিন্তু কি করব কিছু তো করার নেই। সরকারি নির্দেশ মানতে হবে যে এর মাঝে মধ্যে আবার আলিয়াও গিয়েছি, বন্ধুদের সাথে কোভিড বিধি মেনে। এভাবে কেটে যায় দুটি বছর পড়াশোনা আলিয়াতে M.A একই সাবজেক্টের উপর। অনলাইনে পড়াশোনা কেমন যেন একটা অভিজ্ঞতা হয়ে গেল জীবনের এভাবে একদিন বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেল যে আমাদের আলিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে সেদিনকার কথাটা বারবার মনে পড়ছিল কিন্তু এটাই ভেবে সান্ত্বনা দিতাম মনকে। যে এক স্থানে সারাজীবন তো থাকার জায়গা না। অতএব প্রত্যাবর্তন করতেই হবে সেই ভেবে আমাদের বন্ধুরা জুনিয়র ভাইয়েরা একটা বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজন করল। তাদের দেওয়া ডেট এবং বিদায় দিন গেলাম আলিয়াতে কিন্তু ওই দিনটা ছিল। বড় কষ্টের আজও সেই কষ্টের কথা মনে পড়লে মনটা বেঁধে ওঠে, সেদিনও কেঁদেছিলাম আজও কাঁদি আলিয়ার পড়াশুনা জীবনের কথা ভেবে। কিন্তু কিছু করার ছিল না। শিক্ষা জীবন তো এক জায়গায় থাকার জায়গা না সেদিন ভাইদের সাথে তাদের ব্যবহার তাদের আচরণ আমাদেরকে মুগ্ধ করেছিল চোখ ভরা পানি নিয়ে হৃদয় ভরা কষ্ট নিয়ে অন্তর ভাঙ্গা মন নিয়ে বিদায় নিলাম চিরদিনের জন্য আলিয়া থেকে আলিয়াকে আলবিদা জানিয়ে চলে এলাম। (সালটি ছিল ২০২২)

                 আবার শিক্ষার নেশা চেপে ধরে আমাকে। অনেক ভাবনা চিন্তা করলাম কিন্তু মনকে বোঝাতে পারলাম না কি এই জীবনটা বিনা কাজকর্মে বাপের রক্ত ঘামানো পয়সা কে খরচ করে পড়াশোনার জন্য আবারো দুটি বছর আগিয়ে যাওয়ার নেশা আমাকে চেপে ধরল। এই শিক্ষার নেশা মন নিয়ে হৃদয়কে সান্ত্বনা দিয়ে আলিয়ার ব্যথা বেদনাকে বুঝতে না দেওয়ার জন্য ভর্তি হলাম হাড়োয়া স্টেশন সংলগ্ন ফন্ট পেজ অ্যাকাডেমিতে B.Ed  কোর্সের জন্য (2022) । জীবনে হয়তো স্বপ্ন দেখিনি যে চাকরি করে খাব তবে উচ্চ degree অর্জন করে মনকে স্থির না করতে পেরে চাকরির ভাবনা মাথায় নিলাম এই ভেবে যে চেষ্টা করেই যায় বাকিটা আল্লাহর উপরে ছেড়ে দিলাম। কারণ রসুলের ওই হাদিসটি দিকে লক্ষ্য করে যে রসূল বলেছেন যে ব্যক্তি চেষ্টা করল সে সফল হল এই ভেবে এখনো নিজেকে পড়াশুনোর দিকে আগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাকিটা আল্লাহর উপরে ছেড়ে দিলাম। এই দুটি বছরের ভিতরে আমার জীবনের সবচাইতে বেশি কষ্টের দিন। এখনো পর্যন্ত না পাচ্ছি কোন স্বস্তি না পাচ্ছি কোন কর্মের ঠিকানা না পাচ্ছি কোন পরিবারের অভাব অনটন দূর করতে। এই জন্য বেশি কষ্ট হচ্ছে আর বাকি ইচ্ছে তো ছেড়েই দিলাম আর না হয় কষ্ট বাকিটা জীবন করেই যাবো। তবুও এখনো নিরাশ হয়নি। আল্লাহ পাকের বান্দা হয়ে। এইভাবে চলে গেল আমার জীবনের ২৬ টা বছর। জানিনা আল্লাহ পাক আমারই জীবনে আর কি রেখেছে কষ্ট না সুখ না আনন্দ না দুঃখ আল্লাহই ভাল জানে। সব ছেড়ে দিলাম তার হাতে। তবে শিক্ষা জীবন এখনো থেমে যায়নি। তবে সামনে যে দিন আসছে আর মাত্র দুটি মাসসময় তারপরে হয়তো আমার জীবনের শেষ শিক্ষা শিক্ষকের কাছ থেকে নেওয়া। এবার শিখতে গেলে হয়তো নিজেকে নিজেই স্টাডি করতে হবে।


জীবনকে এখনো থামিয়ে দেয়নি তবে শৈশব পার করলাম, কৈশোর পার করলাম যৌবনও পার করছি অবশেষে আর একটাকাল বাকি আছে। সেটা সামনে। জানিনা এই পৃথিবীতে আর কতদিন থাকবো তবে এতোটুকুই বলি সকলকে যদি আমার দ্বারা কোন কষ্ট পেলে দুঃখ পেয়ে থাকেন কেউ তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দেবে কারণ এই দুনিয়া থেকে একদিন তো চলেই যেতে হবে। দুদিনের দুনিয়া এসেছি মেহমান হয়ে আবার রবের কাছে ফিরে যেতে হবে তাই আল্লাহ আমাদের সকলকে তার কাছে যাওয়ার আগে আমাদের ঈমানের কাপড়ই মুড়িয়ে নেন। তারপরে আমাদেরকে ডাক দেন। এই দুনিয়ায় একে অপরের মধ্যে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। অতএব সকলকে ক্ষমার নজরে দেখবেন অপরাধ করলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবেন। কেননা মৃত্যু আমাদের অধীনে কোটি মৃত্যু আমাদেরকে বারবার স্মরণ করে। কিন্তু আমরা মানুষ হয়ে মৃত্যুকে কখনো স্মরণ করি না তাই সকলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন আমিও আপনাদের ক্ষমা করে দিলাম সকালে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই দোয়া রইল।

বিঃ দ্রঃ - এটাতে আরো কিছু যুক্ত যুক্ত হতে পারে। বর্তমান আমার স্মৃতিতে যতটুকু এসেছে ততটুকু বলতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ আবার স্মৃতিতে আসলে পরে ইন শা আল্লাহ লিখবো।



মৃত্যু - ইং....................সাল

          বাংলা ..................বঙ্গাব্দে
           হিজরী.....................সন

আমার মৃত্যুর তারিখটা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রেখে গেলাম। কারণ এটা আর আমার লেখা সম্ভব নয় ।আল্লাহ শুকরিয়া এখনো বেঁচে আছি জানিনা আল্লাহপাক কতদিন বাঁচিয়ে রাখবেন তবে আমি কিন্তু একেবারে শেষ লগ্নে এসে পৌঁছেছি তার কারণ যৌবনকাল তো আর বেশি দিন বাকি নেই তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা হায়াত ও কতদিন রেখেছে জানিয়া তবে রব্ব ডাক দিলে চলে যেতে হবে। তখন আর এই দুনিয়াতে থাকা চলবে না । قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ ۖ

অনুবাদঃ বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে। (সূরাঃ আল জুমুআহ, আয়াতঃ ৮)

فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُون

অনুবাদঃ অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না। (সূরাঃ নাহল, আয়াতঃ ৬১)

তবে এতটুকুই বলি আল্লাহ যেন আমাদের পরিপূর্ণ ঈমানদার না বানিয়ে মৃত্যু দেন না। আমিন ছুম্মা আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন। 
                                                 ইতি...............
                                                অধম গোনাহগার 
                                             মোহাঃ নাজমুস সাহাদাত